ক্যাম্পাসভয়েস:ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট চালিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে, এতে তাদের অন্তত ৫০ সহপাঠী আহত হয়েছে। তবে কর্তব্যরত পুলিশের শটগানের গুলি ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছে, এমন ১২ জন ছাত্র-শিক্ষকের পরিচয় জানা গেছে। আহতদের সবাই বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার ইশফাক আলী।
বুধবার দুপুরে রামপুরা সংলগ্ন আফতাবনগর হাউজিং-এর কাছে বিক্ষোভ করছিল প্রতিষ্ঠানটির অন্তত সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপরে বাড়তি ১০ শতাংশ হারে টিউশন ফির ওপর আরোপিত ভ্যাট বাতিলের দাবিতে এ বিক্ষোভকালে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সজীব হোসেনে জানায়, পুলিশের হামলায় অধ্যাপক তাসফিক জাবেদ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাসফিকুল এলাহী চৌধুরী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী জয়, তানভীর ও অর্থনীতির শিক্ষার্থী আবির। এ ছাড়া রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অর্থনীতির তৌহিদুল ইসলাম, বিবিএর শামীম খান, অলক, রফিক। মাথা ফেটেছে বাঁধন, নাজিয়া, মুন্নি নামে তিন শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া হিমেল নামে একজনেরও মাথা ফেটেছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রামপুরা-বাড্ডা সংলগ্ন রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করছে।
শিক্ষার্থীরা দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে- আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার পর্যন্ত বিক্ষোভ ও কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী আহত হওয়ার প্রতিবাদেও কর্মসূচি চলবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শিহাব উদ্দীন খান বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী প্রায়ই সবাইকে রাবিশ বলেন। আসলে তিনি নিজে রাবিশ। তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্রসমাজ ভ্যাট দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, আহত ছাত্র-শিক্ষকদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তা না হলে প্রতিবাদ চলবে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মহিউদ্দিন জানিয়েছিলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মাসফিকুর রহমান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এয়াশের খান আহত হয়েছেন। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটের টুকরায় আহত হয়েছেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষার্থী কাকন বিশ্বাস বলেন, তারা আফতাবনগরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বসে। তখন পুলিশ এসে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
বিবিএর শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশই আচমকা হামলা চালায়।’
ঢাকা মহানগরীর গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিল। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। বারবার বলার পরও তারা শোনেনি। পরে জোর করে তাদের ইউনিভার্সিটির ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।’
এর আগে গত ঈদুল ফিতরের আগে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নো ভ্যাট শিরোনামে বিক্ষোভ করেছিল। ওই বিক্ষোভে কাকন বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, সরকার আমাদের দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন। তিনি পে কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ১০ শতাংশ হারে ভ্যাটবৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট আলোচনায় ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখেন। এরপর এই সাড়ে সাত শতাংশ রেখেই বাজেট পাস করা হয়।
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গত জুন থেকে রাজপথে আন্দোলনে ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতিও ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে একাধিকবার নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে।